কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে যা জানা অতীব প্রয়োজন

 

 কুষ্ঠ একটি স্বল্প সংক্রামক  তথাপি নিরাময় যোগ্য রোগ ,মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি নামক জীবানু দ্বারা কুষ্ঠ রোগের সৃষ্টি হয়।শতকরা ৯৯ ভাগের ও বেশী লোকের দেহে  কুষ্ঠরোগ প্রতিরোধ করার স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে ।

কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে যা জানা অতীব প্রয়োজন

তথাপি জাতিভেদ নির্বিশেষে স্মাজের যে কোন স্তরের লোক কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হতে পারে পৃথিবীর শতকরা৯০ ভাগের বেশী কুষ্ঠরোগী উন্ননশীল দেশে দেখা যায়। বিশ্ব শ্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১০ সালে প্রায় ১৫,০০০ কুষ্ঠরোগী রয়েছে বলে অনুমান করা হয় দি লেপ্রসি মিশনের

সূচী পত্র ঃ কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে ১০টি তথ্য ও বার্তা

কুষ্ঠরোগ কি এবং কি দিয়ে হয়

কুষ্ঠ একটি জীবানু ঘটিত রোগ ।এ রোগের জীবানু হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায় ।আমাদের স্মাজে বেশির ভাগ লোকের জন্মগতভাবে কুষ্ঠরোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে ।কুষ্ঠ এক্তি মৃদু সংক্রামক রোগ ,কিন্তু ছোঁয়াচে নয় ।শরীরের চামড়ায় বাদামী / লালচে অনুভূতিহীন দাগ কুষ্ঠরোগের প্রাথমিক লক্ষন।তাছাড়াও মুখমন্ডলে ,ঘাড়,বুক,পিঠের অপরিভাগেব্যাথাহীন দানা বা গুটি দেখা যায় ।

চিকিৎসা নিতে দেরি করলে  কখনো কখনো শরীরের বিভিন্ন স্নায়ু ব্যাথা হতে পারে।এছারা হাত,পা কিংবা চোখে অসারতা ও বিকলাঙ্গতা দেখা দিতে পারে।রোগের প্রকারভেদে ৬- ১২ মাস নিয়মিত চিকিৎসায় কুষ্ঠরোগ সম্পূর্ণ ভালো হয় এবং প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা যায়।

কুষ্ঠরোগ আক্রান্ত ব্যাক্তি সমাজে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহন করতে পারে।এমন কি চিকিৎসা চলাকালীন সময়েও কুষ্ঠরোগীরা তাদের পরিবারের সাথে একসাথে বসবাস ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে যা জানা অতীব প্রয়োজন

কুষ্ঠরোগ চেনার উপায় সম্পর্কে জানা

  • চামড়ায় হালকা ফ্যাকাশে বা বাদামী কিংবা লালচে অথবা তামাটে বর্ণের অনুভূতিহীন দাগ যা চুলকায় না ঘামে নাএবং ঐ স্থানের লোম পড়ে যায় 
  • মুখমন্ডল ঘার বা বুক কিংবা পিঠের উপরিভাগে ব্যাথাহীন দানা বা গুটি দেখা যায়।
  • তাছাড়াও হাত, পায়ের অনুভূতি কিছুটা লোপ পেতে পারে ।
  • অনেক সময় কানের লতি ফুলে যায়।
  • অনুভুতিহীনতাই দাগ ,যে কোন আঘাত পাওয়ার জন্য দায়ী যা পরবর্তীতে অধিকাংশ চিকিৎসা কুষ্ঠরোগের অঙ্গ বিকৃতির বৈশিক্ষ্ট্যষমতা কম থাজে তাই। হয়ে দাড়ায়।
  • কখনো  শরীরের বিভিন্ন প্রান্তিক স্নায়ু মোটাসহ ব্যথা যুক্ত হতে পারে
  • ।এ ছাড়াও হাট, পা কিংবা চোখের বিকলাঙ্গতা দেখা দিতে পারে।

কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে জানা খুব প্রয়োজন 

কুষ্ঠরোগ একটি জীবানু ঘটিত রোগ ,যার নাম মাইকোব্যক্টেরিয়াম লেপ্রি ,এই জীবানু শরীরের যে কোন থান্ডা জায়গায় থাকতে ভালোবাসে বিশেষ করে কানের লতি,এবং নার্ভের জায়গাগুলোতে।এই জীবানু শরীরে প্রবেশ করার পর প্রকাশ কাল হলো  ১০ বৎসর ।যার ইমুইনিটি পাওয়ার কম তাদের আগে কুষ্ঠরোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশি। বিশেষ করে মাতৃত্ব কালীন মায়ের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি


এ সময় কুষ্ঠরোগের জীবানু বেশি প্রবেশ করার জন্নএ্যাটাক করে কারন এ সময় ধারন ক্ষমতা কম থাকে তাই।এই রোগ মৃদু সংক্রামক ।কুষ্ঠরোগের দাগ হালকা ফ্যাকাশে বর্ণের হয়ে থাকে ।এই দাগ কখনো চুল্কায় না ,গরম কালে শরীরের সব জায়গাতে ঘামবে কিন্তু ঐ দাগের জায়গাতে কখনো ঘাম বে না ।কুষ্ঠরোগের  জীবানু ২ বৎসরে যে কোন কারো শরীরে ঢুকে থাকতে পারে।কারন প্রকাশ কাল যেহেতু ১০ বতসর।

কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা কোথায় পাওয়া যায়

কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা সাধারণত দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অন্যান্য হাঁসপাতালের কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রে বিনামূল্যে এ রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায় এবং বে-সরকারী যে কোন স্বাস্থ্য ক্লিনিকে পাওয়া যায়।রোগের শ্রেনীভেদে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা ১ ডোজ ,অথবা  ৬ -১২ মাসের হতে পারে ।

অতএব কার্যকর ও উন্নত  চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের কুষ্ঠরোগীরা এখোন দারুনভাবে সমাজ হতে বহিস্কারের শিকার হচ্ছে ।সমাজ থেকে  এই কু -সংস্কার  দূর করার জন্য বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ।জনগনের মাঝে সচেতনতা  বৃদ্ধি করার লক্ষে বাংলা ভাষায় মুদ্রিত স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক উপকরনাদি সরবরাহ করে থাকে।

কুষ্ঠরোগের  জীবানু কোথায় কোথায় থাকে 

কুষ্ঠরোগের  জীবানু সাধারণত ঠান্ডা জায়গায় থাকতে ভালোবাসে ।এই জীবানু দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি শরীরের যে কোন জায়গায় যখন একটি দাগ বের হয় তখন সে বুঝতে পারে ,এবং সে বলে যে আমার দাউদ হয়েছে ।কিন্তু কিছু পরীক্ষা করলে সে বলে আমার চিকিৎসা দরকার নেই ,কারন ঐ দগের জায়গার অংশ কখনো চুল্কায় না ঘামে ও না ।

এই রকম করতে করতে প্রায় ১-৫ বৎসরের মাথায় সে স্বাস্থ্য ক্লিনিকে চলে আসে  কিছু অঙ্গহানি নিয়ে তখন আর করার কিছু থাকলেও  করার থাকে না ।জীবানু নাশের  ঔষধ  খেয়ষ্ঠরোগ ভালো হয় বটে কিন্তু অঙ্গহানি সারানোর জন্য কিছু   ব্যায়াম দেওয়া হয় যদি ব্যায়াম করতে না পারে তাহলে আরোও বেশি ঘা হয়ে আলসার এ পরিনত হয় ।

কুষ্ঠরোগীদের যে পায়ের তলায় ঘা হয় সেই ঘায়ের জন্য অফিস তাদের বিনা টাকার জুতা,স্যান্ডেল সাপ্লাই দেওয়া হয় ।সেই জুতা স্যান্ডেল এর তলা খুব মজবুত কর বানিয়ে দেওয়া হয় ।এটা সাধারন মানুষের জুতার মত নয় কারন পায়ের তলায় বোধ থাকেনা কুষ্ঠরোগ ভালো হয় ,এবং বিনামূল্যে চিকিতসা করা হয়
কুষ্ঠরোগ যেহেতু ভাল হয় ,বিকলাঙ্গতা থেকে বাঁচার উপায় আছে ,কারন প্রাথমিক অবস্থয় যদি কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা নেয় তাহলে ভয় ভীতি থাকেনা ।


কুষ্ঠরোগের বিকলাঙ্গতা  সম্পর্কে তথ্য  যানা

কুস্থরোগের বিকলাঙ্গতা সম্পর্কে দি লেপ্রসী মিশন বাংলাদেশ বলেছেন ,আমাদের সমাজে এখনো কুষ্ঠরোগ নিয়ে কুসংস্কার রয়েছে ।অনেকেই বলে কুষ্ঠ অভিশাপের ফলে হয় ,বেশি পাপ করলে হয় ।তাই এই কু সংস্কার দূর করার জন্য দি লেপ্রসী মিশন বাংলাদেশ পুনর্বাসনের কাজ করে আসছে ।

এই রোগের কারনে হাত/ পা বিকলাঙ্গতা দেখা দেয় । হাত  বাকা হয়ে যায় পা  ছোট আকারে হয় এবং হাত ও পায়ের মধ্য কোন বোধ থাকে না তাই বার বার হাত ও পায়ের মধে্য ঘোষা লেগে ঘা হয় ।এই জন্য রেস্ট দিতে হয় ।যত বেশী রেস্ট দিবে তত বেশী ভালো থাকবে।বাড়িতে ঘায়ের যত্ন  নেয় তারা সবসময় ।

নেই কোন ভয় কুষ্ঠরোগ ভালো হয়

বাংলাদেশের অনেক রোগী আছে যারা রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করেছে বলে কোন অঙ্গ   বিকৃতি ছাড়াই সুস্বাস্থ্য লাভ করেছে এমন বর্তমানে তারা কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা থেকে মুক্ত ।প্রতি বৎসরে বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালন করা হয় ।এই দিনে গ্রামের কিছু এলাকায় ২৫ টি বাড়ি সার্ভে করা হয় ।সেই বাড়ি সার্ভে করে যদি কুষ্ঠরোগের রোগি পাওয়া যায় তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় বিনামুল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তাই আসুন সব জায়গাতে কুষ্ঠ বার্তা  পোঁছে দিয়ে নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচার সুযোগ দিন।তবে আমাদের অঙ্গীকার কুষ্ঠ মুক্ত বাংলাদেশ ।দি লেপ্রসী মিশন কুষ্ঠরোগীদের চিকিৎসা দানের সহিত জরিত সকল বেসরকারিও সরকারি প্রতিস্থান গুলোকে কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ,প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়বলে জানা যায়।

চিকিৎসার আগে ও পরে কেমন দেখা যায় 

কুষ্ঠ রোগের জীবানু দিয়ে হয় সেই জীবান্যর নাম মাইকব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রী।এই জীবানু আবিস্কার করেছেন ডাক্তার  আরমুর  হ্যান্সন ১৮৭৩ সালে  কুষ্ঠরোগের জীবানু আবিস্কার করেন ।কুষ্ঠরোগ চিকিৎসার আগে কিছু সমস্যা নিয়ে আসে ।সেই সমস্যা গুলো কি কি চলুন নিম্নে দেখি ।

এই রোগের দাগ শরীরের যে কোন স্থানে হতে পারে। শুধু মাথার চান্দি আর বগোল বাদ দিয়ে শরীরের সব জায়গায় হতে পারে ।এই রোগের রোগীরা কিছু সমস্যা নিয়ে আসে সমস্যা গুলো হলো 


হায়পোপিগ্মেন্টেড এবং ইরিথিমেটাস স্কিন প্যাচ
নার্ভ ইনলারজমেন্টশ্রীর
স্মেয়ার পজিটিভ
প্যাচ লালচে অথবা ফ্যাকাশে হতে পারে । 
কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে যা জানা অতীব প্রয়োজন

প্রাথমিক অবস্থায় যদি কেউ চিকিৎসা নেয় তাহলে তার  গ্রেড/ ডিজাবিলিটি আসবে না এই জন্য এই রোগ খুজে পাওয়া খুব কস্টকর ।গ্রেড ২ হলে চিকিৎসায় কুষ্ঠরোগের জীবানু শরীরে থাকবেনা কিন্তু গ্রেডিং থাকবে এই গ্রেডিং এর জন্য প্রতিদিন কিছু ব্যয়াম করতে হবে সেই ব্যায়াম করলে  শরীর ভালো থাগবে।

কুষ্ঠ ব্যক্তি তাদের  পুনর্বাসনে সহায়তা  করা হয়

কুষ্ঠ ব্যাক্তি ঔষধ খাওয়ার পর ভাল হয়ে গেলে জীবানু ধ্বংস হয় বটে কিন্তু শারিরীক ভাবে গ্রেড ২ এর রোগি ভালো থাকে না ।তাই তারা কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে  ফেলে।এই রোগীদের ২ শ্রেনীর চিকিৎসা প্রদান করে  থাকে .১ এমডিটি,পৌসিব্যাসিলি  পিবি ২,মাল্টি ব্যসিলি এম বি ।পিবি  রোগিদের জন্য ৬ মাসের চিকিৎসা দেওয়া হয় ।

এম বি রোগিদের ১২ মাসের চিকিৎসা প্রদান করা হয় ।এই রোগিরা অফিস থেকে পুনর্বাসনের সহযোগিতা করা হয় ,সেটা আবার রার পারিবারিক অবস্থার নির্ভর করে ।কারন এই রোগিরা শারিরিকভাবে অক্ষম থাকে ।কেউ সহজেই কাজে নিতে চায়না ।এই হাত ,পা দিয়ে কাজ করলে অনেকটা ক্ষতি হয় ,কারন হাত ও পায়ের মধ্যে কোন বোধ শক্তি থাকেনা ।

আধুনিক চিকিৎসায় কুষ্ঠরোগ ভালো হয়

কুষ্ঠরোগের ঔষধ যদি একজন ব্যক্তি  নিয়মিত খেয়ে থাকেন তাহলে তার  শরীর থেকে ৯৯ ভাগ কুষ্ঠরোগের জীবানু থাকে না শুধূ ১পারসেন জীবানু নিয়ে যুদ্ধ করে ।তাই এম ডি টি খান শরীর বাচান।

বাংলাদেশের যে কোন স্বাস্থ্য ক্লিনিকে গেলে সরকারী অথবা বে-সরকারী কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলেই চিকিৎসা সেবা পাবেন ।তাই আসুন নেই কোন ভয় কুষ্ঠরোগ ভালো হয় ।এটাই কুস্টহোরোগীদের অঙ্গিকার ।আপনাদের আশে পাশে কুস্থ্যরোগী পেলে  নিকটস্থ্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।

উপসংহার  

পরিশেষে আমি বকবো আমি এই কুষ্ঠরোগ নিয়ে যে পোস্ট লিখেছি ,আমি কুষ্ঠ ডিপার্টমেন্টে  দীর্ঘদিন কাজ করেছি ,আপনাদের কে বেশ কীছূ তথ্য দেওয়ার চেস্টা করেছি ,এই তথ্য যদি আপনাদের অথবা আপনাদের আশেপাশের কারো  কাজে লেগে  থাকে  তাহলে উপকারে আসবে।আমার এই পোস্ট যদি আপনাদের কাছে  ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাকে লাইক,কমেন্ট ও মন্তব্য করবেন ।আর পরিচিতিদের মধ্যে জানিয়ে দিবেন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url